যে মেয়েটি আগুন ছুঁতে গিয়েছিলো

মূলঃ ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা
অনুবাদঃ কল্যাণী রমা

দূরে হ্রদের জল ঝিলমিল করে উঠলো। এক জ্যোৎস্নায় ভেসে যাওয়া সন্ধ্যায়, এক পুরানো বাগানে, এক থমকে যাওয়া বসন্তের রঙ ছিল সেটা।
হ্রদের দূর তীরে জঙ্গলটা নিঃশব্দে জ্বলছিলো। চোখের সামনে দাউ দাউ করে আগুনের শিখা ছড়িয়ে পড়ছিলো। বনের আগুন।
আগুন নেভানোর ট্রাকটা একটা খেলনা গাড়ীর মত হ্রদের পার ধরে দ্রুত ছুটে যাচ্ছিলো। জলের উপর তার খুব স্পষ্ট ছায়া পড়েছিলো। অসংখ্য মানুষ নীচ থেকে ঢাল বেয়ে পিলপিল করে উপরে উঠছিলো, পাহাড় কালো করে ফেলেছিলো ওরা।

নিজের কাছে এসে দেখি আমার চারপাশের বাতাস স্তব্ধ আর উজ্জ্বল। যেন বৃষ্টিহীন।
ঢালের নীচে শহরের ফালি - এক আগুনের সমুদ্র।
একটি মেয়ে ভিড় সরিয়ে ঢাল বেয়ে নেমে আসছিলো - একা। একমাত্র সে-ই পাহাড়টা বেয়ে নীচে যাচ্ছিলো।
বিস্ময়করভাবে, ওই পৃথিবী ছিলো শব্দহীন।
মেয়েটিকে যখন সোজা আগুনের সমুদ্রের দিকে হেঁটে যেতে দেখলাম, সহ্য করতে পারলাম না আমি।
একটাও শব্দ উচ্চারণ না করে, তখন মেয়েটির অনুভূতির সাথেই কথা বললাম। সত্যি, সত্যি।
“তুমি একা পাহাড় বেয়ে নেমে যাচ্ছ কেন? আগুনে মরবে নাকি?”
“মরতে চাই না, কিন্তু তোমার ঘর পশ্চিমে, তাই আমি পূবদিকে যাচ্ছি।”
মেয়েটির ছবি – আগুনের শিখার সামনে আমার স্বপ্ন ভরে দেওয়া একটা কালো দাগের মত। সেই ছবি চোখ চিরে দিল। ঘুম ভেঙ্গে গেল।
আমার চোখের কোণে জল।

মেয়েটি বলেছিলো সে আমার বাড়ির দিকে যেতে চায় না। আমি তা আগেই বুঝেছিলাম। ও যা কিছুই ভেবেছিলো, সবই তো ঠিক। জোর করে নিজেকে বোঝাতে গেলাম, উপর উপর মেনেও নিলাম যে আমার জন্য ওর সব অনুভূতিই মরে গেছে। তবু মেয়েটির হৃৎপিন্ডের কোথাও এক ফোঁটা হলেও যেন কিছুটা ভালোবাসা আছে – এমন ভাবতে ইচ্ছে করল। সত্যিকারের মেয়েটির সাথে এই আবেগের কোন যোগাযোগ যদিও নেই। নিজেকে বিদ্রূপ করতে করতে তবু গোপনে এই অনুভূতিকেই জীবন্ত করতে চাইলাম।
আচ্ছা, এই স্বপ্নের মানে কি এমন যে মনের একদম গভীরে আমি বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম - আমার জন্য মেয়েটির কোন ভালোবাসাই আসলে নেই?
স্বপ্নটি ছিল আমার আবেগের একটি ছবি । আর স্বপ্নের ভিতর মেয়েটির আবেগগুলো ছিলো যা কিছু আমি ওর জন্য সৃষ্টি করেছিলাম – ঠিক তাই। সেগুলো আমার ছিলো। স্বপ্নে তো প্রতারণা করা যায় না, কোন ছলনা নেই।
অমন করে ভাবতে গিয়ে বড় বিধ্বস্ত আর একা লাগল নিজেকে।

(জে. মারটিন হলম্যান-এর ইংরেজী অনুবাদ থেকে)

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ